নিজের জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে চান ?(Joyful Living) হাসি খুশিতে ভরে থাকতে চান সবসয় ?
আপনার সামনে ২টি বিকল্প | এক, আনন্দময় (Joyful Living) মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করুন | দুই, বর্তমান মুহুর্তগুলিকেই (Joyful Living) আনন্দময় করে তুলুন |
এই ব্লগ জোর দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় পথটির উপর (Joyful Living)| পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, অপনি কিভাবে নিজেকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবেন ? মদ বা ড্রাগস খেয়ে
নয় | সুস্থ স্বাভাবিক থেকেই জীবনের প্রতিটি দিন কিভাবে আনন্দময় করে তুলতে
পারেন , তারই সন্ধান দেওয়া হয়েছে এখানে | বেশ কিছু পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে |
স্টেপ-বাই-স্টেপ করা হয়েছে যাতে আপনাদের সুবিধা হয় এগুলি প্র্র্যকটিস্ করতে |
এগুলি শুধু তত্ত্বকথা নয়, দার্শনিক আলোচনা নয়। বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য নারী-
পুরুষ এই পদ্ধতিগুলি হাতেনাতে করে দেখেছেন। আমরাও দীর্ঘকাল ধরে অনেক
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি এইগুলি নিয়ে। পরিবর্তন এনেছি। দেশের বিভিন্ন শহরে
অসংখ্য নারী-পুরুষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মতোই
এই পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করেছি মানুষদের উপর। যেগুলিকে তাঁরা
ফলদায়ক বলেছেন, সেগুলিকেই এই ব্লগে উপস্থাপিত করা হয়েছে।
জীবনের লক্ষ্য় কি
মানুষ কী চাইছে তার বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে? আমরা কী চাইছি জীবনে?
আপনি হয়তো 20 হাজার টাকা বেতন পান। ভাবছেন, এটা বেড়ে 50 হাজার
হলে ভাল হয়। কেন? বেশি টাকা এলে আপনি আরো (Joyful Living)আনন্দে থাকতে পারবেন। আপনার দু-চাকা গাড়ি আছে। মনে করছেন, একটা চার-চাখা গাড়ি হলে ভাল
হতো। কেন? আরো আরামে যেতে পারতেন।
হয়তো ভাড়া বাড়িতে থাকেন। চেষ্টা করছেন একটা ফ্ল্যাট কেনার। কেন? নিজের বাড়িতে স্বস্তি বেশি। মেয়ের বিয়ে হয়েছে কোলকাতায়। ভাবছেন, দিল্লী বা মুম্বাই শহরে জামাই থাকলে ভাল হতো। কেন? মাঝে মাঝে আপনি বেড়াতে যেতে পারতেন মেয়ের কাছে।
পাড়ায় দুর্গাপুজো। প্রচণ্ড জোরে মাইক বাজছে। আপনি বিরক্ত। মনে-মনে বলছেন, আস্তে বাজাতে পারে না? কেন? শান্ত পরিস্থিতিতে আপনি আনন্দ পান। তাহলে আমরা সবাই কী চাইছি? এক আনন্দময় জীবন। এটাই মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন কাজ, নানান গ্যাজেট্, বাড়ি-গাড়ি-টাকা-এ-সবের মাধ্যমে আমরা ঐ লক্ষ্যে বারবার পৌঁছতে চাইছি। … অথচ এ-সব পেয়েও আমরা অনেকে ঐ লক্ষ্যে যেতে পারি না কেন?
জীবনে অনেক কিছু পেয়েও মানুষ দুঃখী থাকে কেন ?
একটা কারণ-মূল লক্ষ্যের কথা ভুলে গিয়ে আমরা মাধ্যমগুলির উপর বেশি জোর দিই।আরেকটা কারণ-কতো কিছু পেয়েছি এটা না দেখে “কি পাইনি”সেটা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। তার জন্য (Joyful Living) আনন্দময় জীবনযাপন থাকতে পারি না
আসুন, আবার আমরা নিজেদের দিকে তাকাই। এই যে আমি ও আপনি-দেশের অধিকাংশ মানুষের তুলনায় আমরা কি সৌভাগ্যবান নই? জীবন-ধারণের প্রাথমিক তিনটি জিনিস-রোটি কাপড়া মকান্-এ নিয়ে তো আমাদের কোন সমস্যা নেই। আপনি কি জানেন যে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম হলেন আপনি? বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে শুনুন। আপনার মাথার উপর ছাদ আছে? অর্থাৎ, থাকার জন্য একটি ঘর আছে? শোবার জন্য বিছানা আছে? পরনের কাপড়টি ছাড়াও আরো পোশাক আছে আপনার? এর মানে, বিশ্বের ধনী ২৫% মানুষের মধ্যে আপনিও একজন। পৃথিবীতে শতকরা ৭৫ জন লোকের এগুলি নেই।
ব্যাঙ্কে আপনার টাকা আছে? পকেটের মানিব্যাগেও পয়সা আছে? কিছু খুচরো পয়সা আছে ঘরের কোথাও? এর অর্থ, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২৫% লোকের অন্যতম আপনি। এই সংসারে ৬০% মানুষের এগুলিও নেই। কত উপার্জন করেন আপনি? মাসে ৩০০০০ টাকা? তার মানে, বিশ্বের ৪০% ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম আপনি।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২৫% মানুষের অন্যতম হয়েও আপনি দুঃখী কেন? ঠিকই বলেছেন-টাকা থাকলেই সুখ বা আনন্দ পাওয়া যায় না। জীবনে টাকা-পয়সা দরকার, কিন্তু আনন্দময় জীবন কাটাতে হলে প্রয়োজন সচেতনভাবে সে-দিকে এগুনো। একটা পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া। এবং দুঃখগুলিকে দূর করা।
Joyful Living | আনন্দময় জীবনযাপন
কোন ব্লাইন্ড স্কুলে গিয়ে অন্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের দেখুন। এদের অধিকাংশের মুখেই হাসি। দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও এরা কিভাবে এতো (joyful living) আনন্দেময় জীবনযাপনে থাকে? প্রশ্ন করুন ওদের। জানতে চেষ্টা করুন, রহস্যটা কী।
- আপনি ওষুধ কিনতে পারেন। কিন্তু সুন্দর স্বাস্থ্য কেনা যায় না।
- আপনি সুন্দর বালিশ ও শয্যা কিনতে পারেন। কিন্তু ঘুম নয়।
- বাংলো বাড়ি কিনতে পারেন। সুখী পরিবার নয়।
- টাকা দিয়ে কুশলী ইঞ্জিনীয়ারকে আপনি আপনার সংস্থায় রাখতে পারেন। কিন্তু তার আন্তরিকতা পাবেনই, এমন কোন কথা নেই।
- বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পেইন্টিং আপনি কিনতে পারেন, কিন্তু সৌন্দর্যের অনুভূতি টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
- সবরকম কস্মেটিকস্ আপনি টাকা দিয়ে কিনে আনতে পারেন। সৌন্দর্যকেনা যায় না।
- আপনি মিস্ ওয়ার্লডকে বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু টাকা দিয়ে ভালবাসা পাওয়া যায় না।
- টাকা দিয়ে আপনি সবচেয়ে ভাল গাড়ি কিনতে পারেন। মানুষেরসম্মান টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
- ইন্দ্রিয়গুলি আপনাকে সুখ (Pleasure) দিতে পারে, শান্তি (Peace) ন
এবার বুঝলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ২৫ % মানুষের অন্যতম হয়েও আপনি কেন
সুখী নন? আনন্দ এতো ক্ষণস্থায়ী কেন?
প্রাকটিক্যাল হোন | Be practical
আপনাকে দুঃখ দেবার জন্য বহু লোক রয়েছে এই সমাজে। ফ্রী সার্ভিস দিচ্ছে তারা।
কেউ সমালোচনা করে আপনাকে দুঃখ দিচ্ছে। কেউ অকারণে শত্রুতা করে।
কেউ বা ঈর্ষান্বিত হয়ে। কেউ আবার আপনাকে না বুঝে। কেউ কেউ নিছক মজার জন্য।
তা সমাজে যখন এতো লোক রয়েছে আপনাকে দুঃখ দেবার জন্য, তখন নিজেকে
কেন দুঃখ দিচ্ছেন আপনি?
কিভাবে বাঁচবেন এদের হাত থেকে? পরে বলবো সে-কথা।
আপনি দুঃখী। হয়তো এই ভেবে যে আপনার কাছে বিদেশি গাড়ি নেই।
কিংবা আপনার ছেলে অঙ্কে লেটার পায়নি। অ্যাকসিডেন্টের পর আপনাকে একটু
খুড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ভাল কাজ করেও অফিসে প্রমোশন পাননি। স্ত্রী
অনাবশ্যকভাবে দামী কাপ-প্লেট ‘কিনে এনেছেন বাজার থেকে। লটারির টিকিট
কিনেও আপনি পুরস্কার পাননি।… কারণ নানারকম হতে পারে।
কিন্তু এর পরিণতি দু-রকম হতে পারে।
এক, নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে দুঃখ পাওয়া। হা-হুতাশ করা। অন্যের
উপর দোষ দেওয়া। হতাশ হওয়া। রেগে যাওয়া।
দুই, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা। প্রথমটিতে আপনার কোন লাভ হচ্ছে না।
এতে দুঃখ শুধুই বেড়ে যায়।
আপনি যদি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করতে চান, যদি প্র্যাক্টিক্যাল্ হতে
চান, লাভবান হবার ইচ্ছে থাকে, তবে দ্বিতীয় পথেই তা সম্ভব, ভেবে দেখুন।
কিভাবে সমাধান করবেন সমস্যার? পরে আসবো সে-কথার আলোচনায়।
পরিস্থিতি নয়,
একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে রি-অ্যাক্ট করছেন-এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার মানসিকতা পজেটিভ অথবা নেগেটিভ-এর উপর নির্ভর করবে আপনার পরিণতি।
জীবনে যে (Joyful Living)আপনি সবকিছু পাবেনই, পরিস্থিতি যে সবসময় আপনার মনমতো হবেই-এটা চিন্তা করা কি প্র্যাক্টিক্যাল মানুষের লক্ষণ?
জীবনে কি পাইনি-এই চিন্তায় যতো ব্যস্ত থাকবেন, আপনার দুঃখ ততই
বাড়বে। যা পেয়েছেন তাকে কাজে লাগিয়ে আরো এগিয়ে যাবেন কিভাবে,
এ-দিকে বরং নজর দিন।
চোখে দেখতে পেতেন না, কানে শুনতে পেতেন না, কথা বলতে পারতেন না,
সেই হেলেন কেলার বলেছিলেন-
“জীবনে এতো কিছু পেয়েছি যে
কি পাইনি সে-কথা মনেই
থাকে না।”
এবার একলা বসে একটু ভাবুন। দেখবেন, অন্যরা আপনাকে যতো দুঃখ
দিচ্ছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট আপনি নিজেকে দিচ্ছেন। নিজের চিন্তাগুলিকে দেখুন,
নিজের মানসিকতাকে বুঝুন। দেখুন, কিভাবে নিজের সমস্যা নিজেই বাড়িয়ে
তুলছেন।
যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও জীবনে অনেক কিছুই যেমন আমরা পাই না, তেমনি
যোগ্য না হয়েও আমরা পেয়ে যাই অনেক জিনিস। বহু কিছু পেয়ে যাই চেষ্টা
না করেই। বিশ্বাস হচ্ছে না?
টিভিতে পার্লামেন্টের লাইভ টেলিকাস্ট দেখুন। লোকসভায় এম-পি’ রা
কেমন ব্যবহার করেন, ভাল করে দেখুন। এবার নিজের ছেলে-মেয়েকে লক্ষ্য
করুন। এম-পি’দের তুলনায় আপনার সন্তানেরা কত ভদ্র, কত শালীন ব্যবহার,
দেখুন। মা কিংবা বাবা হিসেবে আপনি কত ভাগ্যবান বুঝতে পারছেন?
আপনি অফিসে মাত্র ৮ ঘণ্টা কাজ করেন। সপ্তাহে ৬ দিন। আর আপনার
স্ত্রী বাড়িতে প্রতিদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা ধরে কাজ করেন। রবিবারেও ছুটি নেই।
সি-এল্ নেই, আর্নড্ লীভ নেই, নিগোশিয়েবল্ হলিডে নেই, পুজোর ছুটি নেই,
১৫ আগষ্ট ২৬ জানুয়ারী নেই। বুঝতে পারছেন, আপনি কেমন জামাই-আদরে
আছেন?
আপনার বৃদ্ধ পিতা ১৫ বছর আগে ট্রাংকলে কথা বলতে চাইলে সকাল
৮ টায় লাইন বুক্ করে ফোনের কাছে বসে থাকতেন। কখন হঠাৎ লাইন
লেগে যাবে বলা তো যায় না। সকাল ৮ টায় আগরতলায় লাইন বুক করে
বসে থাকতেন। সন্ধ্যে ৭টায় আগ্রায় কানেক্শন দিয়ে টেলিফোন একচেঞ্জ
বলতো-নিন, কথা বলুন। আর আপনি কী করছেন এখন? ১০ সেকেণ্ডের
মধ্যে লাইন পাচ্ছেন পৃথিবীর যে-কোন জায়গায়।
এ-সব চিন্তা করেছেন কখনো? আপনার ঠাকুর্দা স্বপ্নেও যা কল্পনা করেননি,
যে-সব আজ আপনার হাতের মুঠোয়। সেলফোন, টিভি, ভ্যাকুয়াম্ ক্লীনার,
ফ্রীজ, সোফা সেট, গ্যাসে রান্না, মিউজিক সিস্টেম্, ইন্টারনেট, প্রিন্টার, রঙীন
জেরকস্, মেট্রো রেল, ক্যুরিয়ার সার্ভিস (বাড়ীতে এসে চিঠি নিয়ে যায়), জেল-
ইংকের পেন, হিটার, মিক্সি, …।
এই সঙ্গেই আছে মেডিক্লেমের ব্যবস্থা (হাসপাতালের সব খরচা
বীমা কোম্পানি দেবে), সন্তান বিদেশে পড়তে গেলে ব্যাঙ্ক টাকা দেবে,
আছে এ-টি-এম্ যেখানে যখন-তখন টাকা তোলা যায়, টিভির বিভিন্ন
প্রতিযোগিতায় মোটা টাকা পুরস্কার পাবার সুবিধে, ধারে জিনিস কেনার জন্য
ক্রেডিট কার্ড, …।
বেড়াতে যাবার জন্য বিভিন্ন রকম সুবিধেজনক প্যাকেজ, উৎসবে ক্যাটারিং
ব্যবস্থা, সাহায্যের জন্য মানব-অধিকার সমিতি ও অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (NGO),
দোকানে খারাপ মালের বিরুদ্ধে অভিযোগের জন্য কনজিউমার্স কোর্ট, …।
আগে এমন ছিল যে ভাল ক্যারিয়ার গঠনের জন্য পড়াশোনায় মেধাবী
হতে হতো। আজ এতো লাইন খুলে গেছে যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীও পছন্দমতো
পেশায় গিয়ে প্রচুর উপার্জন করতে পারে। ডাক্তারী-ইঞ্জিনীয়ারিং-আইটি ক্ষেত্রে
নয়, আজ সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করা যায় বিনোদন ক্ষেত্রে (এন্টারটেইনমেন্ট
ইন্ডাস্ট্রি)।
বর্তমান যুগে সবক্ষেত্রেই সুযোগ-সুবিধে প্রচুর বেড়েছে। অথচ মানুষের
জীবনে আনন্দ তেমন নেই কেন?
আনন্দ পাবার তিনটি সূত্র | Three sources of happiness:
ফিজিক্স-এ যেমন আছে নিউটনের গতি-সূত্র, অঙ্কে যেমন আছে ফর্মূলা,
কেমিস্ট্রিতে ল (law),(Joyful Living)
জীবনকে আনন্দময় করে তোলার জন্যও কতগুলি নিয়ম
আছে। এই নিয়মগুলিকে যতো বেশি কাজে লাগানো যাবে, ততই আমাদের
সুবিধে। সচেতনভাবে মাঝেমাঝেই এগুলি অভ্যাস করলে আমাদের জীবনটাই
পালটে যাবে। দৈনন্দিনের জীবন হয়ে উঠবে আনন্দময় (Joyful Living)
।
- পরিস্থিতিতে কি-কি সুযোগ-সুবিধে আছে, লক্ষ্য করুন। কিভাবে সেগুলিকে কাজে লাগাবেন, এ নিয়ে চিন্তা করুন।
- সাধারণ মানুষের কাছে অসাধারণ ব্যবহার আশা করে আমরা নিজেদের দুঃখ বাড়াই। নুনে চিনির স্বাদ আশা করবেন না।
- জীবনে রসিকতাবোধ বাড়িয়ে তুলুন। চারপাশে অনেক মজার- মজার ব্যাপার চলছে। সেগুলিকে লক্ষ্য করুন।
আসুন, এবার এই তিনটিকে ব্যাখ্যা করা যাক।
Negative to Positive | নেতিবাচক থেকে পজেটিভ |
যে-কোনও পরিস্থিতিতেই পজেটিভ ও নেগেটিভ পয়েন্ট থাকে। পজেটিভ
পয়েন্ট হল-সুযোগ, রসদ, আপনার শক্তি, সাফল্য, সাহায্যকারী মানুষ
ইত্যাদি-অর্থাৎ যে-সব পয়েন্ট আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আর,
নেগেটিভ পয়েন্ট-সমস্যা, সংকট, বাধা, আপনার দুর্বলতা, খারাপ লোক,
বিপদ ইত্যাদি।
যেহেতু সব পরিস্থিতিতেই এই দুটি ব্যাপার থাকে, এইজন্যই ইম্পরট্যান্ট
বিষয় হল-আপনার সিদ্ধান্ত, আপনার মানসিকতা। আপনি যদি নেগেটিভ
পয়েন্টকেই বড় করে দেখেন তবে হতাশা বোধ আসবেই। একে বাধা দিতে
পারবেন না। এজন্য প্রথমে দেখুন পজেটিভ পয়েন্টগুলিকে। এগুলির উপরই
জোর দিন। এই পয়েন্টগুলিকে সম্মিলিত করুন।
এবার দেখুন, আরোও কি কি পজেটিভ পয়েন্ট আছে। কেউ কি রয়েছে
যে আপনাকে সাহায্য করতে পারে? তার সাহায্য নেবার চেষ্টা করুন। এমনও
হতে পারে, যতটা সাহায্য আপনি আশা করছেন, ততটা সাহায্য পাওয়া গেল
না। তাই শেষ পর্যন্ত আপনি কি নিজেই পদক্ষেপ (initiative) নিতে রাজি
আছেন? ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ তাহলে একাই চলার জন্য
তৈরি আছেন?
নিজেকে এরই জন্য প্রস্তুত করে তুলুন। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন,
নিজেই সাহস করে এগিয়ে যান।
আপনার ছেলে বাঙলায় এম-এ পাশ করে বসে আছে? চাকরি পাচ্ছে না?
স্বাভাবিক। কারণ আপনারা ভাবছেন যে এই যোগ্যতা নিয়ে শুধু শিক্ষকের
চাকরিই করা যায়। এটা ভুল চিন্তা। শিক্ষকতা ছাড়াও বহু লাইন আছে যেখানে
সে চাকরি পেতে পারে এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে-প্রকাশন সংস্থা,
সংবাদপত্র, টিভিতে বাঙলা সিরিয়ালের গল্প লেখা, অনুবাদকের কাজ, বাঙলা
বিজ্ঞাপনের কপি-রাইটার, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বক্তৃতা লিখে দেওয়া ও
চিঠি লেখা, রেডিও (এফ-এম) এর জন্য নতুন কথিকা বা প্রোগ্রাম তৈরি করা,
ইন্টারনেটে বাঙলা ওয়েবসাইটের নিয়মিত পরিবর্তন, মারোয়াড়ী ও সাউথ
ইন্ডিয়ানদের বাঙলা শেখানো, । চিন্তা করুন, আরো কি-কি লাইন আছে।
আপনার পরিবেশ যতো প্রতিকূলই হোক না কেন, একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা
করুন। গতানুগতিক রাস্তা ছেড়ে অন্য ভাবে দেখুন। পরিস্থিতির সুযোগগুলিকে
আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
কোন সমস্যার যদি সরাসরি (directly) সমাধান করা না যায়, তাহলে ঘুর
পথে (indirectly)-এর সমাধান হতে পারে কি?
হে ঈশ্বর,
আমি তোমার কাছে শক্তি চেয়েছিলাম;
তুমি আমাকে কঠিন পরিস্থিতির সামনে ফেলেছো
যাতে আমি শক্তিশালী হতে পারি।
আমি তোমার কাছে জ্ঞান চেয়েছিলাম;
তুমি আমার সামনে অনেক সমস্যা নিয়ে এসেছিলে
যাতে আমি সেগুলির সমাধান করতে পারি।
আমি তোমার কাছে ঐশ্বর্য চেয়েছিলাম;
তুমি আমাকে দিয়েছো চিন্তাশক্তি
ও কাজ-করার দুটি হাত।
আমি তোমার কাছে সাহস চেয়েছিলাম;
তুমি দিয়েছিলে অনেক বিপদ
যাতে আমি সেগুলির মুখোমুখি হতে পারি।
আমি তোমার আশীর্বাদ চেয়েছিলাম;
তুমি আমাকে দিয়েছিলে ব্যর্থতা ও পরাজয়
যাতে আমি ধুলো ঝেড়ে
আবার উঠে দাঁড়াতে পারি।
আমি তোমার ভালবাসা চেয়েছিলাম;
বহু দুঃখী মানুষকে তুমি আমার কাছে
পাঠিয়ে দিয়েছো।
কখনো-কখনো এমন সমস্যা জীবনে আসতে পারে যার সমাধান নেই। যেমন
ধরুন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হঠাৎ মারা গেলেন। কিংবা, কোন
দুর্ঘটনায় একজনের ডান হাত বা দুটি পা কাটা গেল। অথবা, হঠাৎ ভূমিকম্পে
বাড়িটাই ভেঙ্গে পড়লো।
এ-রকম পরিস্থিতিতে কি করবেন? প্রথমে দেখুন, ঐ ঘটনায় কি-কি ক্ষতি
(damage) হলো। এবারে চিন্তা করুন-কি করলে এই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে
আনতে পারেন? কোন্ কাজ করলে বা কি পদক্ষেপ নিলে ক্ষতির আঘাত সামলে
ওঠা যায়? পরে এ-নিয়ে আলোচনা হবে।
আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে অনেককে পাবেন যাঁরা বড় বেশি অন্যের
সমালোচনা করেন, অন্যের কাজে প্রায়ই ভুল ধরেন এবং নিজেরাও অসন্তুষ্ট
থাকেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে এঁরা নেগেটিভ পয়েন্টকেই বড় করে
দেখেন, নেতিবাচক ব্যাপারের উপর জোর দেন। এঁরা সাধারণত হতাশাবাদী।
এভাবে এঁরা নিজেরা তো অসুখী থাকেনই, অন্যদেরও বিরক্ত করেন।
মনে রাখবেন-
এঁদের উপর রাগ করে লাভ নেই। কারণ নিজেদের নেতিবাচক মানসিকতায়
এঁরা নিজেরাই কষ্ট পাচ্ছেন। যদিও এঁরা মনে করেন যে অন্যেরাই রয়েছে তাঁদের
কষ্টের মূলে। এঁদের প্রয়োজন সহানুভূতি।
জীবনকে আনন্দময় (Joyful Living) করে তোলার জন্য চাই পজেটিভ মানসিকতা। যে-কোন পরিবেশে প্লাস পয়েন্টগুলি দেখার চেষ্টা করলে, সুযোগ-সুবিধেগুলি লক্ষ্য করতে
পারলে, আপনারই লাভ।
দুঃখ প্রায় ক্ষেত্রেই “শাপে বর”। কথায় বলে-আনন্দের অভিজ্ঞতা থেকে
আমরা কিছু শিখিনা, শিখি দুঃখের অভিজ্ঞতা থেকেই।
মানুষের প্রকৃত শক্তি জানতে হলে দেখুন সে বিপদের সময় বা
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কেমন আচরণ করছে। সুখের দিন সবাই ‘বুদ্ধদেব’
হতে পারে, আসল পরীক্ষা তো বিপদের সময়েই।
আপনি জীবনে প্রকৃতই কি achieve করেছেন, কতটা পরিণত মনের
অধিকারী হয়েছেন, তার পরীক্ষা হয় যখন কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির
মোকাবিলা করেন। নিজেকে যাচাই করার সেটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
তাহলে পজেটিভ মানসিকতা গড়ে তোলার পথ কি?
(১) যে-কোনও পরিবেশে কি কি সুযোগ-সুবিধে রয়েছে আপনার জন্য,
সেগুলি আবিষ্কার করুন।
(২) বিপদকে এড়ানো যদি সম্ভব না হয়, তবে দেখুন কিভাবে ক্ষতির
পরিমাণকে কমাতে পারেন।
সাধারণের কাছে অসাধারণ কিছু চাইবেন না
একটা বাস্তব সত্য মনে রাখবেন। কর্মস্থলে, বাড়িতে, সমাজে আপনি যাদের
সঙ্গে মিশছেন, কথা বলছেন, তাঁরা অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। পড়াশোনায় তাঁরা
ব্রিলিয়ান্ট হতে পারেন, অনেক ডিগ্রী থাকতে পারে, উঁচু পদে চাকরি করতে
পারেন, ধনী হতে পারেন, ক্ষমতাশালী হতে পারেন, নিজের ক্ষেত্রে জিনিয়াস
হতে পারেন। কিন্তু মানুষ হিসেবে তো সাধারণ! বেশির ভাগ মানুষই এ-রকম
সাধারণ লোক। তাঁদের কাছে অসাধারণত্ব কেন আশা করছেন? আমার-আপনার
মতো তিনিও রেগে যান, হতাশ হয়ে পড়েন, ছেলেমানুষী ভুল করেন।
সাধারণ মানুষের কাছেঅসাধারণ ব্যবহার আশা করে আমরা নিজেদের দুঃখই বাড়াই।
তবে কি চুপ করে সব সহ্য করবেন? না। স্টেপ তো নিতেই হবে, কিন্তু
কোন স্টেপ নেবার আগে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন কেন তিনি এ-রকম ব্যবহার
করছেন। এটা বুঝতে পারলেই আপনি সঠিক স্টেপ নিতে পারবেন।
অফিসের সহকর্মী আপনার সঙ্গে দাঁত খিচিয়ে কথা বললেই মনে করবেন
না যে তিনি আপনার উপর রেগে আছেন বা আপনাকে অপমান করতে চান।
এমনও তো হতে পারে যে বাড়িতে কোন সমস্যা রয়েছে বা অফিসে আসার
সময় ট্রামে-বাসে সহযাত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে সিট নিয়ে। এজন্য তাঁর মেজাজ
গরম হয়ে আছে বলেই তিনি আপনার সঙ্গে ঐরকম ব্যবহার করেছেন।
মনোবিজ্ঞানে একে বলে displaced anger-অর্থাৎ, একজনের উপর রাগ
অন্যের উপর ঝাড়া।
মানুষ সবসময় যুক্তি দিয়ে চিন্তা বা কাজ করেনা। বেশির ভাগ সময়ই আবেগ
ও সংস্কারবশত সে আচরণ করে। মানুষের স্বভাবকে না বুঝে শুধু সমালোচনা
করলে কেউই লাভবান হয়না।
এক গবেষণায় দেখা যায়-দৈনন্দিন জীবনের ৯০% সময় মানুষ কাজ
করে ও কথা বলে তার আবেগ (emotions) ও সংস্কারের (old habits)
দ্বারা চালিত হয়ে।
সাধারণ মানুষ সম্পর্কে প্রাজ্ঞজনেরা কি বলেছেন, আসুন সে-বিষয়ে কয়েকটি মজার উক্তি শোনা যাক।
বারট্রান্ড রাসেল-“মূর্খামি চিরকালই চলছে। অথচ মানুষ আজও টিকে
আছে। আশ্চর্য!”
বিল্ ভোগান্“-ভুল করা মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। আর নিজের ভুলের
জন্য অন্যকে দায়ী করা হলো পলিটিক্স।”
কনফুসিয়াস “-পশু থেকে মানুষের পার্থক্য সামান্যই। অধিকাংশ মানুষ এই
সামান্য পার্থক্যটুকুও ধরে রাখতে পারে না।”
এমার্সন-“সাধারণ বুদ্ধি (common sense) এবং সহজ ব্যবহারই মানুষের
কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক।”
বার্নার্ড শ “-মেয়েরা মনে করে, তাদের জীবনে কেবল সাতটি স্তর-শিশু,
বালিকা, তরুণী, যুবতী, যুবতী, যুবতী, যুবতী।”
পিরানদেলো-“ভদ্রলোক হওয়ার চেয়ে হিরো (hero) হওয়া অনেক সোজা।”
চার্লস শূলজ-“মানুষকে আমি ভালবাসি; কেবল লোকগুলিকে সহ্য করতে
পারিনা।”